ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের আওয়ামী লীগে যোগদানের সিদ্ধান্ত শুধু একটি ভুল পদক্ষেপই নয়, বরং নৈতিক ব্যর্থতাও বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এ কথা বলেন।
ফেসবুক পোস্টে উপদেষ্টার প্রেস সচিব লেখেন, সাকিব আল হাসানের রাজনীতিতে যোগদানের সিদ্ধান্ত ভুল ছিল না। একজন নাগরিক হিসেবে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ বা রাজনৈতিক ক্যারিয়ার গড়ার অধিকার তার রয়েছে। সাকিব রাজনীতিতে যোগদান করেছেন, সেটি সমস্যা নয়, বরং বড় প্রশ্ন হলো, রাজনীতিতে যোগ দিতে গিয়ে তিনি কাদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন।
শফিকুল আলম আরও বলেন, আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব যখন গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে অভিযুক্ত- যেমন গণহত্যা, গুম, অন্যায়ভাবে গ্রেপ্তার, বিরোধীদের নামে মিথ্যা মামলা, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, পদ্ধতিগত দুর্নীতি, এমনকি ব্যাংক ডাকাতির মতো অপরাধও অন্তর্ভুক্ত, তখন সেই দলে সাকিবের যোগদানের সিদ্ধান্ত নৈতিকভাবে সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য। কেবল এটি রাজনৈতিক পদক্ষেপ ছিল না, এটি ছিল আন্তর্জাতিক মহলের কড়া নজরদারির মধ্যে থাকা শাসন ব্যবস্থার প্রতি মৌন সমর্থন।
দীর্ঘ পোস্টে প্রেস সচিব লেখেন, বড় উদ্বেগের বিষয় সাকিবের কাছ থেকে কার্যকর জনসংযোগ বা কৌশলগত যোগাযোগের কোনো পদক্ষেপ দেখা যায়নি। সাকিব চাইলে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় স্পোর্টস ও ইমেজ ম্যানেজমেন্ট অ্যাজেন্সির পরামর্শ নিতে পারতেন, যারা বিশ্ববিখ্যাত সেলিব্রেটিদের কৌশলগত দিকনির্দেশনা দিয়ে থাকে। তারা নিশ্চয়ই তাকে এমন একটি সিদ্ধান্ত থেকে বিরত রাখত, যা এখন তার মর্যাদা ও ব্র্যান্ড উভয়কেই কলুষিত করেছে। তার ক্রিকেট ক্যারিয়ারের সর্বোচ্চ সময়ে তিনি কোটি কোটি টাকা উপার্জন করেছেন। তাই প্রফেশনাল পিআর পরামর্শ নেওয়া কখনো তার নাগালের বাইরে ছিল না।
সাকিবের নীরবতা বেশি দৃষ্টিকটু ছিল উল্লেখ করে তিনি লেখেন, তবে যেটি এই সবকিছুর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দৃষ্টিকটুভাবে চোখে পড়ে, তা হলো তার নীরবতা। বিশেষ করে তার সরকার এবং তার নিজের শহর মাগুরায় তার সমর্থকদের দ্বারা সংগঠিত সহিংসতা এবং হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে। মাগুরায় বেশ কয়েকজন বিরোধী কর্মীকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল, তবুও সাকিব কিছুই বলেননি। কোনো নিন্দা নেই, ন্যায়বিচারের জন্য আহ্বানও অনুপস্থিত। কোনো ক্ষমা প্রার্থনা নেই। তার নীরবতা কেবল হতাশাজনক ছিল না, এটি বধির ছিল।
প্রেস সচিব লেখেন, সাকিব বাংলাদেশের সর্বকালের সবচেয়ে প্রতিভাবান ক্রিকেটার হতে পারেন। কিন্তু প্রতিভা ও জাতীয় দলের হয়ে পারফর্ম করা কিন্তু দায়মুক্তি দেয় না। একটি সরকারের পাশে দাঁড়িয়ে, যাদের বিরুদ্ধে জাতিসঙ্ঘ নিজ দেশের জনগণের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ এনেছে- তিনি দেশের ইতিহাসের কিছু অন্ধকার অধ্যায়কে বৈধতা দিয়েছেন।
শফিকুল আলম লেখেন, এই মুহূর্তে, তার কর্মকাণ্ডের সবচেয়ে যুক্তিসঙ্গত ব্যাখ্যা হলো লোভ। তার রাজনৈতিক পদক্ষেপে বিতর্কিত ব্যক্তিত্বদের সাথে তার সম্পর্ক সবকিছু একই দিক নির্দেশ করে। সেটি হলো ব্যক্তিগত লাভ, জনসেবা নয়।
সাকিবের আওয়ামী লীগে যোগদান বিশ্বাসঘাতকতা ছিল উল্লেখ করে তিনি লেখেন, এক দিন সাকিবকে ফিরে আসতে হতে পারে। সম্ভবত তখন তিনি অবশেষে সত্যের মুখোমুখি হবেন আর জানবেন আওয়ামী লীগে তার যোগদানের সিদ্ধান্ত কেবল একটি ভুল পদক্ষেপই ছিল না, বরং একটি বিশ্বাসঘাতকতা ছিল।
খুলনা গেজেট/ টিএ